ভূতের আবার ঘরও থাকে নাকি?

ভাবছো, ভূতের আবার ঘরও থাকে নাকি? বড়োজোর গাছ থাকতে পারে; প্রিয় শেওড়া গাছ, কিংবা বটগাছ বা পাকুড় গাছ। তাই বলে আস্ত একটা বাড়ি! না, আসলে ব্যাপারটা হলো গিয়ে এই বাড়িওয়ালা ভূতটা যার, মানুষ থাকতে তার নাম ছিলো বিল বেটি। এই বিল, আর তার স্ত্রী সারাহ বেটি, দুজনে মিলে নিউ জার্সিতে একটা বিশাল বাড়ি বানানো শুরু করেছিলেন; প্রায় ১৫০ একর জমির উপরে। কিন্তু বাড়ি বানানো শেষ করার আগেই, ১৯৩০ সালে মারা যান বিল। তারপর সারাহও আর বিয়ে করলেন না। তাদের ৪ ছেলেমেয়েদের মানুষ করলেন, বিয়ে দিলেন। ১৯৪১ সাল পর্যন্ত ছিলেন ঐ বাসাতেই। তারপর তারা চলে গেলেন। বাসায় একটা স্কুল হলো। কয়েক দশক স্কুলটার ঠিকানাও ছিলো ঐ বাড়ি। শেষমেশ ১৯৭২ সালে ডন বার্লিংগেম আর তার স্ত্রী ক্যারল বাড়িটা কিনে নেন। আর তারপরই আবির্ভাব ঘটলো বিল বেটির ভূতের। ডন আর ক্যারল তো বাড়িটা কিনলেন, তারপর খুব যত্ন করে বাড়িটা নতুন করে সাজালেনও। গোল বাঁধলো ওরা বাড়িতে ওঠার পর। ওরা নাকি প্রায়ই কার পায়ের শব্দ পেতেন। সেই পায়ের শব্দ শুধু হাঁটাহাঁটিই করতো না, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা-ও করতো। কী ভীষণ কথা ভাবো!

অবশ্য বিলের ভূতের কিন্তু রসবোধও কম নয়। ধরো ডন আর ক্যারল দু’জনে মিলে খুব মজাসে একটা ছবি দেখছেন। ছবির একদম ক্লাইমেক্স চলে এসেছে, এই কি না কি হয়, অমনি বিলের ভূত দিলো চ্যানেল পাল্টে! যাঃ! কিচ্ছু বলারও যো নেই। ভূকে কি আর কিছু বলা যায়!

তবে বিলের ভূতটা খুবই ভালো। ওদেরকে ভয় দেখায় না। কেন দেখাবে বলো, ওরা যে বিলের বাসাটাকে খুব যত্ন করেই রেখেছেন। আর বিলও যে ওর বাসাটাকে খুব ভালোবাসে, সেটা একদিনের ঘটনাতেই খুব বোঝা গেলো। একদিন ডন আর ক্যারল দূরে ঘুরতে যাবেন। বের হওয়ার সময় ডন বললেন, ‘আজকে বোধহয় বৃষ্টি হবে। জানালাগুলো বন্ধ করে গেলে হয় না?’ ক্যারল ওর কথা উড়িয়েই দিলেন। ‘ধুর, আজকে এত্তো সুন্দর আবহাওয়া। আজকে আবার বৃষ্টি হবে কিভাবে?’ কিন্তু সেদিন সত্যি সত্যি বৃষ্টি নামলো। যাকে বলে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। ওরা তো চিন্তায় চিন্তায় অস্থির। না জানি ঘরের ভেতর কি অবস্থা। ওরা তো জানালা সব খুলেই চলে এসেছেন। তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে দেখেন, ওমা! বাইরের দিকের সবগুলো জানালা বন্ধ! ঘরের ভেতরে এক ফোঁটা বৃষ্টির পানিও আসে নি! বিলের ভূত ছিলো বলেই রক্ষা! নইলে তো ঘরের ভেতর বন্যা-ই হয়ে যেতো!

এসব ঘটনা দেখে ক্যারল ওর এক বান্ধবীকে সব বললেন। সে আবার প্যারাসাইকোলজি নিয়ে পড়াশুনা করছে। ওকে জিজ্ঞেস করলো, ওরা কি বাসা ছেড়ে দেবে কিনা? ওর বান্ধবী বললো, ছাড়ার কি দরকার? বিলের ভূত তো আর ওদের কোনো সমস্যা করছে না। উল্টো ও আরো খুশি-ই হচ্ছে।

ভাবছো, বিলের ভূত যদি সত্যি-ই থাকে, তাহলে আগে কেউ দেখলো না কেন? আসলে আগেও দেখেছিলো। দেখেছিলো বিলের স্ত্রী সারাহ। কিন্তু নিজের স্বামীর ভূত দেখে সেটা কি আর সবাইকে বলে বেড়ানো মানায়, বলো? আর বললেই বা কে বিশ্বাস করতে যায়! তোমাদের মতো একই চিন্তা খেলেছিলো ডন আর ক্যারলের মাথায়ও। অনেক খুঁজে-পেতে সারাহর এক গৃহকর্মী ইউজিনের কাছ থেকে ওরা এই তথ্য পেয়েছিলো। একদিন নাকি ইউজিন সারাহ’র সাথে ওদের বারান্দা গেছে কি কাজে। গিয়ে দেখে কি, কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। আর ওদের দেখে মুহূর্তের মধ্যেই কোথায় যে উবে গেলো! আর সেই লোককে এক পলক দেখে সারাহ’র কি কান্না! আমার স্বামী এসেছিলো। আর এরপর থেকে তো ইউজিন আর কখনোই ওই বারান্দায় যেতো না।

শেষমেশ আর ধৈর্য্য রাখতে পারলো না ডন আর ক্যারল। ওরা অন্তত এইটুকু জানতে চায়, ওরা কার সাথে বাস করছে। ভূতের সাথে, নাকি ওদের কোনো কল্পনার সাথে। ওরা এক বিখ্যাত প্যারাসাইকোলজিস্টকে ডাকলো। সেও এসে খুব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে শুরু করলো। কিন্তু ওরাও হার মানলো, চূড়ান্ত করে কিছুই বলতে পারলো না। তাতে কি, বিল বেটির ভূত তো আর ওদের কোনো বিপদ ঘটাচ্ছে না। সুতরাং ওরা বিল বেটির ভূতের সাথে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো।


Must Comment: